মিউজিকের জন্য ততটা পাগল ছিলাম না যতটা ছিলাম টেকনোলজির প্রতি। ঘটনাচক্রে মিউজিক আর টেকনোলজির সম্মিলন হয় সিনথেসাইজারের মাধ্যমে
মিউজিকের প্রতি আগ্রহ না থাকার পরও প্রথম প্লেব্যাক গানেই জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়া কি চাট্টিখানি কথা? উপরন্তু দুই বার অস্কার, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডিগ্রি, দেশসেরা পদক, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা থেকে শুরু করে নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ হোয়াইট হাউজে ডিনারের দাওয়াত পাওয়া যে সঙ্গীত পরিচালকের রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি তিনিই আল্লা রাখা রহমান, সংক্ষেপে যিনি সকলের কাছে পরিচিত এ আর রহমান নামে। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বড় হয়ে স্রেফ প্রতিভার খাতিরে অর্জিত খ্যাতিকে স্বাভাবিক মনে হলেও তাঁর ক্ষেত্রে গল্পটা ছিল অনেকটাই আলাদা। মাত্র নয় বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে পেটের দায়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন সঙ্গীত জগতে। বলা হয়ে থাকে তাঁর সুর দেয়া কোন গানই আজ পর্যন্ত ফ্লপ করেনি।
শৈশবের দিনগুলো
১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি মাদ্রাজে(বর্তমান চেন্নাই) বাবা আর. কে. শেখর আর মা কস্তুরি দেবীর ঘরে জন্ম নেন এ আর রহমান। জন্মের পর তাঁর পারিবারিক নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। সুরকার পিতার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই গানের মাঝে বড় হতে থাকেন তিনি। মাঝে মাঝেই স্টুডিওতে যাওয়া হতো তাঁর। মাত্র চার বছর বয়সে একা একাই হারমোনিয়াম বাজাতে শিখে যান রহমান। এত ছোট্ট ছেলের প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে যান সঙ্গীত পরিচালক সুদর্শনম মাস্টার। প্রতিভা যাচাই করতে হারমোনিয়ামের কিগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে ছোট্ট রহমানকে বাজাতে বললে অসাধারণ বাজনায় তাক লাগিয়ে দেন তিনি। প্রাণভরে আশীর্বাদের দেয়ার সাথে বাবা আর. কে. শেখরকে বলেন তাঁকে মিউজিকের প্রশিক্ষণ দিতে। তখন থেকেই পিয়ানো বাজানো শেখা শুরু করেন রহমান।
সিনথেসাইজারের সাথে পরিচয়
বড় হতে হতে সুরের সাথে পরিচয়, স্টুডিওর বন্ধন আর শেখা হারমোনিয়াম-পিয়ানোকে ছাপিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নই বড় হয়ে ওঠে এ আর রহমানের। একবার বিদেশ থেকে ফেরার সময় বাবা আর. কে. শেখর সাথে করে আনেন একটি সিনথেসাইজার। সে সময়ে খুব কম মানুষের কাছেই ছিল এই মিউজিক্যাল যন্ত্রটি। টেকনোলজির প্রতি আগ্রহী রহমান স্বভাবতই আকৃষ্ট হলেন যন্ত্রটির প্রতি। দিনরাত সিনথেসাইজার নিয়ে করতে থাকেন সুরের নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট। টেকনোলজি আর মিউজিকের সংমিশ্রণের ফল সিনথেসাইজারের মাধ্যমেই সুরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাঁর।
বেড়ে ওঠা
নয় বছর বয়সেই বাবার মৃত্যু হলে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে এ আর রহমানের কাঁধে। বাবার রেখে যাওয়া দুটি কি-বোর্ড ভাড়া দিয়ে আসা আয়ে মা-বোনদের দেখাশোনা ও খাবার যোগাড় দুরূহ হয়ে ওঠায় বালক বয়সেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি।
১১ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা দলের সাথে কি-বোর্ড বাজিয়ে আয় করতে শুরু করেন রহমান। ফরমায়েশি গান কি-বোর্ডে বাজানোই ছিল তাঁর কাজ। বাবার বন্ধু এম. কে. আরজুনানের দলে কাজ করার সুবাদে গিটার থেকে শুরু করে হারপেজ্জী, অটোমিয়াম, ফিঙ্গারবোর্ড, কনসার্ট হার্পসহ নানা যন্ত্র বাজানোয় পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ২৫ বছর পর্যন্ত নানা রকম কাজ করতে হয় তাঁকে। এ সময় রুটস ব্যান্ডে বন্ধু শিবমণি, জোজো, জন এন্থনি ও রাজা-র সাথে পারফর্ম করার সুযোগ পান। এছাড়া তামিল সঙ্গীত পরিচালক ইলায়ারাজার দলে বাজিয়েছেন কি-বোর্ড। সুর দিয়েছেন বিজ্ঞাপনের জিঙ্গলস ও বিভিন্ন তথ্যচিত্রেও।
গান দিয়েই অক্সফোর্ড
সংসারের টানাপোড়েনে পড়াশোনাকে বিদায় জানাতে হয়েছিল এ আর রহমানের। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা দলে বাদকের কাজ করার সুবাদে ভ্রমণ করেছেন দেশ-বিদেশে। কিন্তু মিউজিকে তাঁর অসাধারণ প্রতিভার কারণে তিনি পড়াশোনার সু্যোগ পেয়েছিলেন পদ্মশেষাদ্রী বাল ভবন ও মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ নামের দুটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে সেখানে পড়াশোনা না করে সিদ্ধান্ত নেন এমভি বিশ্বনাথন, রাজকোটি, রমেশ নাইডুর অর্কেস্ট্রা দলে কাজ করার। আর তাদের সাথে কাজ করার সুবাদে তিনি বিশ্বভ্রমণ করেন এবং সুযোগ পান জাকির হোসেন ও কুন্নাকুডি বিদ্যানাথনের সাথে পারফর্ম করার। এটাই ছিল তার জীবনের মোড় ঘোরার প্রথম বাঁক। সুযোগ পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজ অফ মিউজিকে পড়ার। সেখান থেকে তিনি ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল মিউজিকে ডিগ্রি অর্জন করেন।
দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান
সুরকার জীবনের প্রথম ছবি মুক্তির দিনটিতেই মারা যান এ আর রহমানের বাবা আর. কে. শেখর। দেখে যেতে পারেননি নিজের সাফল্য। সন্তানের মনেও আঁচড় কাটে এই দুঃখ। একদিকে সংসারের অভাব অন্যদিকে পিতৃশোক মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল রহমানের। বড় হতে হতে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এ আর রহমান। অভাবের দিনও ফুরোতে শুরু করে। কিন্তু কোথাও যেন অস্থিরতা কাজ করত মনে। ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসার পর বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করতে থাকেন। টানা নয় বছর একই কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান তিনি। তারপর ইলায়ারাজার পরামর্শে মনোনিবেশ করেন কীভাবে সৃজনশীল কাজে নিযুক্ত হওয়া যায়। এরপর কাজ নিলেন বিজ্ঞাপনী ফার্মে। জিঙ্গেল তথা বিজ্ঞাপনী স্লোগান লেখা ও তাতে সুর দেয়াই ছিল তাঁর কাজ। এই কাজ করতে করতেই তিনি ইসলামিক আধ্যাত্মিক গানের প্রতি আগ্রহী হন। যার ফলস্বরূপ তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মিউজিক অ্যালবামটি ছিল তামিল সংকলনের ইসলামিক আধ্যাত্মিক গানের। যার নাম দ্বীন ইসাই মালাই।
১৯৮৪ সালে তার ছোট বোন অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো চিকিৎসাতে যখন কাজ হচ্ছিল না তখন এক বন্ধুর পরামর্শে বোনকে নিয়ে গেলেন পীর কাদরি নামের এক মুসলিম পীরের কাছে। পীরের উপদেশ মোতাবেক কাজ করার ফলে তার বোন সুস্থ হয়ে ওঠে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার। ধর্মান্তরিত হবার পূর্বে তাঁর মা ইসলামি নাম রাখার জন্য এক জ্যোতিষীর কাছে নিয়ে যান এ আর রহমানকে। জ্যোতিষী নাম রাখলেন আবদুল রহমান। তারপর সুরকার নওশাদ আলীর সাথে পরিচয় হলে তিনি আবদুল রহমান বদলে নাম রাখলেন আল্লা রাখা রহমান, সংক্ষেপে এ আর রহমান। তিনি বলেন-
“আমার মা আল্লাহর কাছে যেসব প্রার্থনা করেছেন তারই ফসল আমি। আমি যা তার কারণ হলো, প্রতিদিন সচেতন ও আন্তরিকভাবে পাঁচবার নামাজ পড়ি। আল্লাহ যা চান আমি তাই হবো। আমি তা জানি। তিনি আমাকে সবই দিয়েছেন। তিনি আবার সব কিছু নিয়েও নিতে পারেন। তাই যদি তিনি করেন তাহলে কোনো প্রশ্ন করব না, কোনো আপত্তি করব না। তাঁর সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেবো।”
কর্মজগতে এ আর রহমান
কর্মজগতে সাফল্যের কমতি নেই। শুরু থেকে এখন অবধি সব কাজেই অর্জন করেছেন আকাশছোঁয়া সাফল্য। বিজ্ঞাপনী ফার্মে কাজ করেছেন টানা ৫ বছর। তার সুর দেয়া জিঙ্গেলগুলো কতটা জনপ্রিয় তা টাইটান ওয়াচ আর এয়ারটেলের বিজ্ঞাপন দেখলেই বুঝতে পারা যায়। দীর্ঘ সময়ে ৩০০টিরও বেশি জিঙ্গেলে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে পাঞ্চাথান ইন রেকর্ড স্টুডিওর মাধ্যমে সঙ্গীতে নিজের একটি জগৎ তৈরির কাজে লেগে পড়েন। পরবর্তীতে এই স্টুডিও ভারতের সেরা সাউন্ড রেকর্ডিং স্টুডিও হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।
এরপর এক অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে পরিচয় হয় পরিচালক মনি রত্নমের। তার সুরে মুগ্ধ হয়ে এক দেখাতেই প্রস্তাব দেন তার রোজা ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করার। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯৯৫ সালে কাজ করেন হিন্দি ছবি রঙ্গিলা তে। কলিউড তথা তামিল থেকে পদার্পণ করেন বলিউডে। মা তুঝে সালাম গানটির নতুন সুর করে প্রিয় হয়েছেন সকলের। বোম্বে (১৯৯৫), দিল সে (১৯৯৮), তাল (১৯৯৯), জুবাইদা (২০০১), লাগান (২০০১) ছবিগুলোতে কাজ করেছেন তিনি।
এরপর ব্রিটিশ সুরকার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার একটি মিউজিক্যাল ড্রামার প্রস্তাব দেন তাকে। গীতিকার ডন ব্ল্যাকের সাথে মিলে তৈরি করেন বলিউড ছবির সমালোচনামূলক ও বিদ্রুপাত্মক ড্রামা বোম্বে ড্রিমস – যা এতটাই সফল হয়েছিল যে ২০০৪ সালে ড্রামাটি আবার বৃহৎ আকারে লঞ্চ করা হয়। তার দুই বছর পর টরেন্টোতে প্রিমিয়ার করা হয় তার কাজ করা লর্ড অফ দ্য রিংস এর মিউজিক্যাল সংস্করণ। যার বাজেট ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার।
হলিউডে ইনসাইড ম্যান (২০০৬) ছবির সাউন্ডট্র্যাক কম্পোজার ও এলিজাবেথ: দ্য গোল্ডেন এইজ (২০০৭) এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির জয় হো গানটির জন্যই তিনি পেয়েছেন অস্কার ও গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। ২০১০ সালে বিখ্যাত ছবি ১২৭ আওয়ার্স এর জন্য তিনি পুনরায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের (অস্কার) মনোনয়ন পান।
এক নজরে সব পুরস্কার আর প্রাপ্তি
- প্রথম ছবি রোজা তে কাজ করে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সর্বপ্রথম পেয়েছেন রজত কমল পুরস্কার।
- ১৯৯৫ সালে সঙ্গীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন মরিশাস ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ও মালয়েশিয়ান অ্যাওয়ার্ড।
- এছাড়াও চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয় বার তামিলনাড়ু রাজ্য ফিল্ম পুরস্কার ও দু’বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
- তামিলনাড়ু সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন কালাইমামানি অ্যাওয়ার্ড।
- ২০০৬ সালে বিশ্ব সঙ্গীতে অবদানের জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
- এছাড়াও মিডেলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, আন্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
- ২০০৯ সালে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অফ ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড (বাফটা) পেয়েছেন।
- ২০১০ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন পদ্মভূষণ পুরস্কার এবং জয় হো গানের জন্য গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড।
- দুই বার অস্কার অর্জন করেছেন।
- হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সাথে ডিনারের দাওয়াত পেয়েছেন।
- ২০১৩ সালে কানাডায় তার নামে সড়কও করা হয়।
পরিবার এবং মানবতায় এ আর রহমান
পারিবারিকভাবে সায়রা বানুর সাথে বিয়ে হয় এ আর রহমানের। বর্তমানে তিন সন্তানের জনক তিনি। সন্তানরা-ও সঙ্গীত জগতের মানুষই বলা যায়। ইতোমধ্যেই পুত্র আমিনকাপলস রিট্রিট সিনেমায় নানা এবং কন্যা খাতিজা এনথিরেন সিনেমায় পুধিয়া নিধিয়া গানটি গেয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে।
এ আর রহমান বিভিন্ন সময় জনকল্যাণমুখী কাজ করে অনেক মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। আগে থেকেই বেশ কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্টপ টিবি’র একজন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ঐ বছরেই সুনামি কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কনসার্টের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইন্ডিয়ান ওশেন এর সাথে কাজ করেছেন। ২০০৬ সালে চেন্নাইতে নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দ্য বানায়ান স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির মিউজিক থিম করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে ফ্রি হাগ ক্যাম্পেইনের পথিকৃৎ ছিলেন এ আর রহমান। বিভিন্ন সময় অসহায় নিপীড়িত মানুষদের জন্য নির্মিত ছবিতে বিনামূল্যে কাজ করেন তিনি।
এ আর রহমান বলেছেন –
“A Good Film Demands Its Own Score And If You’re A Musician, Your Conscience Will Never Allow You To Do Something Mediocre For A Good Film.”