৫ বছর বয়সে আপনি কী করতেন? হয়ত আধো আধো বুলিতে কথা বলতেন অথবা খেলনা নিয়ে এখানে ওখানে ছোটাছুটি করতেন। অনেকে হয়ত বলতেও পারবেন না কী করতেন। কিন্তু ভাবতে পারেন? মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি মঞ্চে উঠেছেন, শিশুশিল্পী হয়েও মঞ্চ কাঁপিয়েছেন নিজ প্রতিভায় আর মুগ্ধ করেছেন হাজারো দর্শক-শ্রোতাকে। তিনি শুধু তাঁর সময়কার বিখ্যাত তারকা নন; তাঁকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগীতশিল্পী। গত শতকের ’৭০ ও ’৮০-র দশকের মিউজিক স্টাইল থেকে শুরু করে ফ্যাশন আইকন হয়ে আমেরিকান সংস্কৃতির ধারায় পরিবর্তন আনা এ সংগীতশিল্পী সর্বকালের অন্যতম সেরা পারফর্মার। অর্জন করেছেন অসংখ্য পদক ও সম্মাননা। তিনি পপ গানের সাথে মঞ্চ মাতানো ব্রেক ডান্সের মুনওয়াকার, কিং অভ পপ মাইকেল জ্যাকসন।
জন্ম ও জ্যাকসন ফাইভে আসা
১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডিয়ানার গ্যারি নামক শহরের এক সংগীতপ্রেমী পরিবারে মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের জন্ম। বাবা মাইকেল জো জ্যাকসন ছিলেন একজন ক্রেন অপারেটর। পূর্বে তিনি একজন খুব ভালো গিটারিস্ট ছিলেন। আর মা ক্যাথেরিন জ্যাকসন ছিলেন গৃহিণী। জ্যাকসনের বাবার খুব ইচ্ছে ছিল একদিন তিনি নামকরা গায়ক হবেন কিন্তু সংসারের টানাপোড়েনে জলাঞ্জলি দিতে হয় সে স্বপ্নকে। তারপর প্রায় সব বাবার মত তিনিও নিজের স্বপ্ন সন্তানদের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চান। জ্যাকসন তাঁর নয় ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। জ্যাকি, টিটো, জারমেইন, মাইকেল ও মার্লন – এই পাঁচজন কে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় তাদের পারিবারিক ব্যান্ড দ্য জ্যাকসন ফাইভ। ক্যাথেরিন সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই লোকসংগীত ও ধর্মীয় গান শেখাতেন। সেই থেকেই মাইকেলের গান শেখার হাতেখড়ি। জ্যাকসন ফাইভ পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। মাইকেলের নাচ আর স্টেজ মাতানো পরিবেশনার কারণে ব্যান্ডের মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠেন তিনি।
ক্যারিয়ারের যাত্রারম্ভ
দর্শকদের মুগ্ধ করার প্রয়াস আর প্রতিভা জ্যাকসনকে অল্প বয়সে নাম-যশ-খ্যাতি এনে দেয়। ধীরে ধীরে জ্যাকসনের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্কের হার্লেম নেইবরহুডে অবস্থিত এপোলো থিয়েটারে পারফর্ম করার সময় মোটাউন-এর রেকর্ডিং আর্টিস্ট গ্ল্যাডিস নাইট ও পিয়ানিস্ট বিলি টেইলরের নজর কাড়ে জ্যাকসন ফাইভ। ঐ বছর কণ্ঠশিল্পী ডায়ানা রস গ্যারিতে সোল উইকেন্ড প্রোগ্রামে জ্যাকসন ফাইভের সাথে যোগ দেয়। তারপর ডায়ানার কথায় জ্যাকসন মোটাউন রেকর্ডসের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। জ্যাকসনের সুরে ও স্টেজ পরিবেশনায় অভিভূত হয়ে মোটাউন রেকর্ডসের প্রধান বেরি গর্ডি তাঁর ক্যারিয়ারের দায়িত্ব নেন।
দ্য উইজ এবং অফ দ্য ওয়াল
১৯৭৮ সালে দ্য উইজার্ড অফ ওজ এর একটি আফ্রিকান-আমেরিকান ভার্সন দ্য উইজ এ স্কেয়ারস্ক্র চরিত্রে অভিনয় করেন জ্যাকসন। চলচ্চিত্রটির সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবামের ইজ অন ডাউন দ্য রোড নামক হিট গানে ডায়ানা রসের সাথে দ্বৈত পরিবেশনা করার পর ঝুঁকে পড়েন নাচের দিকে। তাঁর নাচের এমন প্রতিভা ছিল যে নাচের জগতে তাঁর নাম এখনো এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
দ্য উইজ এ কাজ করাকালীন জ্যাকসনের সাথে পরিচয় হয় বিখ্যাত প্রযোজক কুইন্সি জোনসের। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালের অফ দ্য ওয়াল অ্যালবামে এই দুই প্রতিভাবান একসাথে কাজ করেন। আর তাদের প্রতিভার সংমিশ্রণে অ্যালবামটি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। প্রথমবারের মতো জ্যাকসনের কোনো অ্যালবাম ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রির মাইলফলক অর্জন করেন যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। অফ দ্য ওয়াল প্রকাশের পর জ্যাকসনের প্রথম একক শিল্পী হিসেবে কাজ করার সাফল্য স্বরূপ এই অ্যালবামের শী ইজ আউট অফ মাই লাইফ এবং রক উইথ ইউ গানসহ ৪টি গানই জায়গা করে নেয় বিলবোর্ডের টপ-১০ এ।
সর্বকালের বিখ্যাত অ্যালবাম থ্রিলার
অফ দ্য ওয়াল অ্যালবামের সাফল্য দেখে ১৯৮২ সালে জ্যাকসন ও কুইন্সি আবার জুটে বেধে কাজ শুরু করেন। প্রকাশিত হয় জ্যাকসনের সেই নামকরা বেস্ট সেলার অ্যালবাম থ্রিলার। এটি জ্যাকসনের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম যেটিতে প্রযোজক কুইন্সি জোনস তাকে সাহায্য করেছেন। অ্যালবামের বিট ইট, বিলি জিন, থ্রিলার এই তিনটি গান জ্যাকসনকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়ার পাশাপাশি থ্রিলার অ্যালবামটি ৪০ মিলিয়ন কপি বিক্রির মাইলফলক স্পর্শ করে। যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন কপিই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়। অ্যালবামটি প্রকাশের পর তাঁর ৭টি গান টপ-১০ এ স্থান করে নেয়। এছাড়া অ্যালবামটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৮টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। থ্রিলার অ্যালবামটি এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এখন পর্যন্ত সেই বেস্ট সেলারের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। তাছাড়া অ্যালবামের মিউজিক ভিডিও ভিন্ন ধাঁচের হওয়ায় জ্যাকসনের মন মানসিকতাঁর ধরনও খানিকটা আন্দাজ করা যায়। তাঁর এই অ্যালবামটির মিউজিক ভিডিও বর্ণবাদবিরোধী বার্তার আভাস দেয় যার ফলে রেডিও স্টেশন ও প্রভাবশালী মিউজিক ভিডিও চ্যানেল এমটিভি কর্তৃক প্রচলিত বর্ণবাদ প্রথা নির্মূল হয়। পরবর্তী বছর ১৯৮৩ সালে, জ্যাকসন আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত একক পারফর্মার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঐ বছরই ভিক্টোরি অ্যালবামে কাজ করার মাধ্যমে ব্যান্ড জ্যাকসন ফাইভকে বিদায় জানান তিনি।
এক নজরে মাইকেল জ্যাকসনের বিখ্যাত গান ও অ্যালবামসমূহ
- গট টু বি দেয়ার (১৯৭১)
- বেন (১৯৭২)
- মিউজিক এন্ড মি (১৯৭৩)
- ফরেভার,মাইকেল (১৯৭৫)
- অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯)
- থ্রিলার (১৯৮২)
- উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড (১৯৮৫)
- ব্যাড (১৯৮৭)
- ডেঞ্জারাস (১৯৯১)
- হিস্ট্রিঃ পাস্ট, প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার, বুক ওয়ান
- ইনভিন্সিবল (২০০১)
- মাইকেল (২০১০)
- এক্সকেইপ (২০১৪)
মানবতার অভিব্যক্তি
পরপর কয়েকটি অ্যালবামে কাজ করার পর কুইন্সি ও জ্যাকসনের বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আফ্রিকায় অর্থসংকট দেখা দিলে ১৯৮৫ সালে তারা একত্রিত হয়ে দরিদ্র অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড নামক কনসার্টের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি শিশু সহায়তা ও পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করেন হিল দ্য ওয়ার্ল্ড। তাঁর জনসেবা মূলক কাজ দেখে অভিভূত হয় প্রায় সবাই। ১৯৯৩ সালে তাঁকে গ্রামিতে লিভিং লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড এবং সোল ট্রেন এর পক্ষ থেকে হিউমেনিটেরিয়ান অফ দ্য ইয়ার ট্রফি প্রদান করা হয়।
ব্যায়বহুল নেভারল্যান্ড রাঞ্চ
জ্যাকসন সবসময়ই জনসমাগম এড়িয়ে চলতে চাইতেন। একাকী জীবন তিনি বেশ উপভোগ করতেন। অনেক সময় তিনি মিডিয়া কভারেজ ও ইন্টারভিউ দিতেও অনীহা প্রকাশ করতেন। নিঃসঙ্গ জীবনকে নিজের মত করে সাজানোর উদ্দেশ্যে ১৯৯০-র দশকের প্রথম দিকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ২,৭০০ একর জমিতে তৈরি করেন এক বিশাল রাঞ্চ যার নাম দেন পিটার প্যানের গল্পানুসারে, নেভারল্যান্ড। ২,৭০০ একর জমির উপর ৬টি বেডরুম, ১টি পুল হাউস, ৩টি গেস্ট হোম ও চার একর জমির ১টি লেক দিয়ে খুব সুন্দর করে সজ্জিত করেছেন পুরো জায়গাটা। বড় বড় নাগরদোলা, শিশু পার্কের মতো নানা রাইড ও বসিয়েছিলেন সেখানে। একটি শিম্পাঞ্জিও পালতেন তাঁর বাড়ির জায়গায় যেটিকে নাম দিয়েছিলেন বাবলস। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের খেলার জন্য জায়গা টা উন্মুক্ত করে দিতেন জ্যাকসন।
যৌন নির্যাতন অভিযোগ ও নানা সমালোচনার হিড়িক
১৯৮৩ সালের নভেম্বরে পেপসিকো-র সাথে ৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেন জ্যাকসন এবং ১৯৮৪ সালে তাদের এক বিজ্ঞাপনে কাজ করার সময় জ্যাকসনের চেহারা ও স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক) পুড়ে যায়। এতে তাকে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়। সার্জারি করার পর তাঁর নাকের খানিকটা অংশ পরিবর্তিত হওয়ার পাশাপাশি তাঁর চেহারার রং পাল্টে যায়। এজন্য তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে ত্বকের রং পাল্টানো মূল কারণ ছিল ভাটিলাইগো (রোগ)।
জ্যাকসনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি আর জনসেবার উপর কলঙ্কের দাগ পড়ে যখন ১৯৯৩ সালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। নেভারল্যান্ডের অবস্থানকারী ১৩ বছরের এক বালক এ অভিযোগ তোলে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কোন প্রমাণ পায়নি। পরে ঐ বালকের পরিবারের সাথে বিষয়টি মীমাংসা করেন জ্যাকসন।
১৯৯৫ সালে তাঁর অ্যালবাম হিস্ট্রি: পাস্ট, প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার, বুক ওয়ান প্রকাশিত হলে তাঁকে আবারও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অ্যালবামটির দে ডোন্ট কেয়ার আবাউট আস নামক গানে ব্যবহৃত শব্দ দ্বারা ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ মূলক আচরণের প্রকাশ ঘটে। পরে সমালোচনা এড়াতে গানের লিরিক্সে পরিবর্তন আনেন জ্যাকসন। তিনি তাঁর ভুলের ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠিও পাঠান সিমোন উইসেন্থাল সেন্টার ফর হলোকাস্ট এর প্রধান রাব্বি মার্ভিন হায়ারকে যিনি এ গানের লিরিক্স নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন।
২০০৩ সালে জ্যাকসনকে পূর্বের ন্যায় যৌন হয়রানি, শিশু অপহরণ, জোরপূর্বক মদ্যপানের চেষ্টা ও মিথ্যা কারাবাসের মত বেশ কয়েকটি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়। মিডিয়ার উস্কানিতে যার রেশ ২০০৫ সাল অব্দি গড়ায়। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় সে বছরই ১৪ জুন, তাকে সকল মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
বৈবাহিক জীবন
১৯৯৪ সালে জ্যাকসন বিখ্যাত রকস্টার এলভিস প্রিসলির কন্যা লিসা মেরি প্রিসলিকে হঠাৎ বিয়ে করেন। শোনা যায়, তিনি নিজের পুরনো ইমেজ ফিরে পেতেই হঠাৎ এ শিল্পীকন্যাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৬ সালের আগস্টে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ঐ বছরেই তিনি তাঁর সেবিকা ডেবি রোউ-এর সন্তানের বাবা হতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় পুত্র প্রিন্স ও কন্যা প্যারিস। ১৯৯৯ সালে আবারও বিবাহবিচ্ছেদ হয় জ্যাকসনের। পরবর্তী সময়ে সারোগেট মাদারের মাধ্যমে তিনি ব্লাংকেট নামক এক সন্তানের বাবা হন।
আবারও বিপর্যয়
২০০৫ সালে মামলা লড়তে গিয়ে জ্যাকসনের সুনাম ও আর্থিক অবস্থা দুটোই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সেসময় তাঁর সাথে পরিচয় হয় বাহরাইনের তৎকালীন রাজপুত্র সালমান বিন হামাদ বিন ইসা আল-খলিফার। তিনি জ্যাকসনের মামলা মোকদ্দমা ও অন্যান্য খরচ বহন করেন এবং জ্যাকসনকে বাহরাইনে ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান।
কিন্তু বিনিময়ে বন্ধু-রূপী সালমান চায় আল-খলিফা রেকর্ড লেবেল থেকে জ্যাকসনের একটি অ্যালবাম, আত্মজীবনী গ্রন্থ এবং একটি মঞ্চ পরিবেশনা। জ্যাকসনও তাঁর সাহায্যের প্রতিদান দিতে এসব করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বিধি বাম! বন্ধুত্বের দাম দিতে গিয়ে আবার মামলার আসামি হন তিনি। শর্ত পূরণ করতে না পারায় জ্যাকসনের বিরুদ্ধে ৭ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মামলা করে সালমান।
সেই খরচের সাথে ২০০৮ সালে নেভারল্যান্ডের জন্য মোট ২৪.৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণের ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। ঋণ আদায়ের জন্য জ্যাকসনের প্রিয় ক্রিস্টাল গ্লাভস ও বাড়ির বেশ কিছু আসবাবপত্র নিলামে তোলা হলে সেটি ঠেকাতে এক আইনি আবেদন করেন তিনি।
ঐ সময়ই জ্যাকসন দিস ইজ ইট কনসার্টের মাধ্যমে শেষবারের মত মঞ্চে ওঠার ঘোষণা দেন। এত সমালোচনা, এত অভিযোগ এর পরেও যখন দেখলেন তাঁর ভক্তরা তাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসে তখন তিনি একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে আরও এগিয়ে যাওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
আকস্মিক মৃত্যু
২০০৯ সালের ৮ জুলাই লন্ডনের ওটু এরেনা থেকে শুরু হবে দিস ইজ ইট কনসার্ট ট্যুর, এ ঘোষণা দেয়ার ঠিক ৪ ঘন্টার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তিনি বেশ অবাকই হন। আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, কবে আবার নিজ চোখে ভক্তদের উচ্ছ্বাস দেখতে পাবেন সেজন্য দিন গুনতে শুরু করেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। কামব্যাক ট্যুরের আগেই ২৫ জুনে ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন সবার প্রিয় মাইকেল জ্যাকসন। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় আমেরিকাসহ পুরো বিশ্ব।
তদন্তে জানা যায়, প্রোপোফল এর বিষক্রিয়া তাঁর মৃত্যুর কারণ। ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মারি অতিমাত্রায় প্রোপোফল ও অন্যান্য চেতনানাশক ওষুধ (মিডাজোলাম, ডায়াজেপাম এবং লিডোকেন) গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন জ্যাকসনকে। পরে অবশ্য তাকে অনিচ্ছুক হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু বিশ্ব হারিয়ে ফেলে এই প্রতিভাবান মানুষটিকে।
নানা কটুক্তি, নানা সমালোচনার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষটি যখন আবার সংগীতজগতে আলো ছড়ানোর জন্য বেরিয়ে আসছিলেন তখনই হারিয়ে ফেলল তাকে সবাই। তবু একটাই প্রশান্তি যে জ্যাকসন এক টুকরো সুখ নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও আজও পুরো বিশ্ব তাকে ভক্তি নিয়েই স্মরণ করে। তারই প্রমাণ মেলে দিস ইজ ইট, কার্টেইন কল, লিভিং নেভারল্যান্ড ডকুমেন্টারিগুলোতে। তাই হয়ত জ্যাকসন বলেছেন ̶
If you enter this world knowing you are loved and you leave this world knowing the same, then everything that happens in between can be dealt with.
Author: Asrifa Sultana Reya
Student, University of Dhaka