My friend came to me, with sadness in his eyes
Told me that he wanted help
Before his country dies
Although I couldn’t feel the pain, I knew I had to try
Now I’m asking all of you
To help us save some lives
১৯৭১ সালের ১ অগাস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘বাংলা দেশ’ শিরোনামের এ গানটি গেয়ে বিশ্ববাসীকে জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের সংকটের কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর ডাকে হয়েছিল কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এ কনসার্টের ফলে যে কেবল শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা গিয়েছিল তা নয়, রাতারাতি বাংলাদেশের পক্ষে তৈরি হয়েছিল বিশ্ব জনমত। ষাটের দশকের বিশ্ব কাঁপানো ব্যান্ড বিটলসের অন্যতম সদস্য ছিলেন হ্যারিসন।
রক সঙ্গীতের এক নক্ষত্র
একাধারে গিটারিস্ট, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, রক সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র জর্জ হ্যারিসনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছোট থেকেই তাঁর ছিল সঙ্গীতের প্রতি ভালো লাগা বিশেষ করে গিটারের প্রতি। ১৩ বছর বয়সে সে তাঁর প্রথম গিটারটি হাতে পান। হ্যারিসন গর্ভে থাকা অবস্থায় তাঁর মা নিয়মিত রেডিও ইন্ডিয়ার সাপ্তাহিক আয়োজনে সেতার ও তবলা পরিবেশনা শুনতেন। তাঁর ধরনা ছিল এ সঙ্গীত নবজাতকের উপর প্রভাব ফেলবে ও প্রশান্তি বয়ে আনবে। এটা কাকতালীয় হলেও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি হ্যারিসনের বিশেষ ভালো লাগা কাজ করেছিল এবং তিনি রবি শঙ্করের কাছে সেতার বাজানো শেখেন। তার অনেক কম্পোজিশনে ভারতীয় সঙ্গীতের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
হ্যারিসনের গিটারের সুরে শ্রোতারা মুগ্ধ হত নিমেষেই। তার প্রতিভা দেখে প্রশংসা করেনি এমন মানুষ খুব কমই ছিল, বলা যায়। তিনি যে শুধু সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বিখ্যাত এটি বললে ভুল হবে, তিনি রেকর্ড ও চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দ্য বিটলস এর লিড গিটারিস্ট হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত।
দ্য কোয়াইট বিটল
রক সঙ্গীত ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যান্ডের নাম দ্য বিটলস। এক সময় ব্যান্ডটির নাম ছিল দ্য কোয়ারিমেন। জন লেনন,পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন ও রিঙ্গো স্টারের মত প্রতিভাবান চার সদস্যের ব্যান্ড ছিল দ্য বিটলস। এই চারজনের মধ্যে হ্যারিসন সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। তার প্রতিভার জন্য তিনি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ভক্তদের কাছে, সেই সাথে তিনি দ্য কোয়াইট বিটল নামে পরিচিতিও লাভ করেন। ব্যান্ডে জন লেনন (কণ্ঠ ও রিদম গিটার), পল ম্যাকার্টনি (কণ্ঠ ও বেজ গিটার) ও রিঙ্গো স্টারের (ড্রামাস) সাথে পারদর্শীতার সাথে স্বকীয়তা বজায় রেখে হ্যারিসন (লিড গিটারিস্ট) কাজ করেছেন। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডটি সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিটলসের বেশির ভাগ গান জন লেনন ও ম্যাকার্টনির লেখা ও সুর দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে হ্যারিসনের করা কিছু গান ব্যান্ডের অ্যালবামে প্রকাশিত হয়। আর ব্যান্ডে তার নিজস্ব প্রতিভার প্রকাশ ঘটে ডোন্ট বদার মি (১৯৬৩) গানটির মাধ্যমে। হ্যারিসনের নিজের লিখা ও সুর দেয়া বেশ কয়েকটি গানের মধ্যে ইফ আই নিডেড সামওয়ান, সামথিং, ট্যাক্সম্যান, হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস বেশ জনপ্রিয়। ১৯৬৯ সালে বিটলস ভেঙে যাওয়ার পরেও তার যেসব গান জনপ্রিয় হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে মাই সুইট লর্ড (১৯৭০), গিভ মি পিস অন আর্থ (১৯৭৩), অল দোজ ইয়ার্স এগো (১৯৮১), গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ (১৯৮৭) উল্লেখযোগ্য।
হ্যারিসন ১৯৬৮ সালে চলচ্চিত্র, ওয়ান্ডারওয়াল এর সাইকেডিলিক সাউন্ডট্র্যাক তৈরি মধ্য দিয়ে একক কাজ শুরু করেন। বিটলস ভাঙার পরে তিনি একক রেকর্ডিং চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তার তিনটি অ্যালবাম অল থিংস মাস্ট পাস (১৯৭০), লিভিং ইন দ্য ম্যাটারিয়াল ওয়ার্ল্ড (১৯৭৩), ক্লাউড নাইন (১৯৮৭) বেশ জনপ্রিয় হয়।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, শিক্ষক-বন্ধু রবি শঙ্করের অনুরোধে হ্যারিসন নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন প্রাঙ্গণে ১ আগস্ট কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নামের এক দাতব্য কনসার্ট আয়োজন করেন। হ্যারিসন, রবি শঙ্কর ছাড়াও অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, রিঙ্গো স্টার সহ আরও অনেকে। কনসার্টে হ্যারিসন তার নিজের লিখা ও সুর করা ‘বাংলা দেশ’ গানটি পরিবেশন করেন যেটি আজও বাঙালির মনে গেঁথে আছে। বিখ্যাত এই শিল্পী মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালিদের যেভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। একমাত্র বাঙালিরাই জানে অসময়ে পাশে দাঁড়ানো এই মানুষটি কতখানি আশার আলো জাগিয়েছিল। এছাড়াও কনসার্টে তিনি সর্বমোট আটটি গান পরিবেশন করেন। প্রথমে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হলেও পূর্বেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আরেকটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। কনসার্টের টিকিট বিক্রি হতে রাতারাতি প্রাপ্ত ২,৪৩,০০০ মার্কিন ডলার ইউনিসেফের ফান্ডে জমা করা হয়। যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। একজন ব্রিটিশ শিল্পীর এই অসামান্য অবদান বাঙালিদের কাছে আজও স্মরণীয়।
বন্ধুত্ব ও অন্যান্য
জর্জ হ্যারিসন ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রবি শঙ্করের কাছে সেতারবাদন শিখতে শুরু করেন। তাঁর সেতারবাদন শোনা যায় বিখ্যাত নরওয়েজিয়ান উডস গানটিতে। একই সঙ্গে তিনি যোগসাধনাও শুরু করেন। তিনি ভারতে এসেছেন কয়েকবার। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। কিন্তু ১৯৬৮ সালের দিকে বুঝতে পারলেন তার পক্ষে ভালো সেতারবাদক হওয়া সম্ভব নয়। তবে রবি শঙ্করের সাথে তার গুরু-শিষ্য সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব শেষ জীবন অবধি অব্যাহত ছিল। ১৯৭১ এর কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ছিল তাদের বন্ধুত্বের অনন্য এক নির্দশন।
১৯৭৯ সালে হ্যারিসন হ্যান্ডমেড ফিল্মস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় উদ্যোগী হন। তিনি যেসব চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন তার মধ্যে মন্টি পাইথন ফিল্ম অফ ব্রায়ান (১৯৭৯), টাইম ব্যান্ডিটস (১৯৮১), মোনা লিসা (১৯৮৬) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি প্রায়ই তার প্রাক্তন ব্যান্ডমেট ও মিউজিশিয়ানদের অ্যালবামে কাজ করেছেন। ১৯৮০ সালের শেষদিকে তিনি ট্রাভেলিং উইলবারিস নামে গঠন করে বব ডিলান, রায় অরবিসন, টম প্যাটি ও জেফ লিনের মত শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন।
শেষের দিনগুলো
অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে ১৯৯৭ সালে হ্যারিসনের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১৯৮০ সালে আততায়ীর গুলিতে জন লেননের মৃত্যুর পর তিনি জনসম্মুখে যাওয়া কমিয়ে দেন, তারপরও ১৯৯৯ সালে ফ্রিয়ার পার্কের নিজ বাড়িতে তিনি হামলার শিকার হন। মাথা ও ফুসফুসে প্রায় ৪০টির মত ছুরির আঘাত নিয়ে হাসপাতালে গেলে ফুসফুসের কিছু ক্ষত-বিক্ষত অংশ বিচ্ছেদ করা হয়। আঘাত গুরুতর হলেও সে যাত্রায় বেঁচে যান হ্যারিসন।
২০০১ সালে তার ফুসফুস থেকে ক্যান্সার টিউমার অপসারণ করা হলেও নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার মস্তিকে সংক্রমিত হয়। ঐ বছরের ২৯ নভেম্বর, ৫৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে হলিউড ফরেভার সিমেট্রিতে দাহ করা হয়। ক্যালিফর্নিয়ায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর পরিবারের সদস্যরা হিন্দু শাস্ত্রানুসারে তাঁর ভস্ম ভারতের বেনারসের কাছে গঙ্গা ও যমুনার পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
জর্জ হ্যারিসনের শেষ অ্যালবাম ব্রেইনওয়াশড (২০০২) তার ছেলে ড্যানি হ্যারিসন ও বন্ধু দ্য ইলেক্ট্রিক লাইট অরকেস্ট্রা (ইএলও) এর জেফ লিন শেষ করেন। অ্যালবামের প্রথম গান, অ্যানি রোডে হ্যারিসন গেয়েছেন
But oh Lord we’ve got to fight
With the thoughts in the head with the dark and the light
Author: Asrifa Sultana Reya
Student, University of Dhaka