ব্যান্ড মেঘদলের গিটারিস্ট রাশিদ শরীফ শোয়েব তিন মাস আগে ব্যান্ড ছেড়েছেন, সোমবার (৩১ আগস্ট) সকলের উদ্দেশ্যে এ ঘোষণা দেন। মেঘদলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও, নিশ্চিত হওয়া যায় ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকালিস্ট শিবু কুমার শীলের ঘোষণা থেকে।
শুরু থেকে মেঘদলের সাথে ছিলেন শোয়েব। দীর্ঘ ১৮ বছরের এ যাত্রার ইতি টানতে হবে এমন এক সময়ে, এভাবে, তা কে জানত? মেঘদলের জন্য শোয়েবের যে ভালোবাসা রয়েছে, বিভিন্ন কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, সে কারণেই সরে আসেন তিনি। মিউজোফিয়াকে তিনি জানান, মেঘদলের শ্রোতাদের প্রতি তাঁর বিশ্বাস রয়েছে যে ব্যান্ড ভাঙার কোনো বিতর্ক তৈরি হবে না। এছাড়া কোনো মহল বিতর্ক তৈরি করতে পারবে না। ব্যান্ড সদস্যদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পারস্পারিক শ্রদ্ধার জায়গা বজায় রেখে এ সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে। মেঘদলের একজন মুখপাত্র ও বুকিং এজেন্ট হিসেবেও তিনি পরিচিত হওয়ার প্রায়ই তাঁকে মেঘদল সম্পর্কিত নানান কিছু জিজ্ঞেস করা হয় যা তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। কেননা মেঘদল ছেড়ে আসাটা তাঁর জন্য এক কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল।
শোয়েব মিউজোফিয়াকে আরও জানান, সামনে কী আছে সময়ই তা বলে দেবে। তবে তিনি যে ধরনের সংগীত চর্চা মেঘদলের সাথে করেছেন, যেটি তাঁর ভালো লাগে, তাই করে যাবেন। আপাতত পছন্দের শিল্পীদের সাথে কাজ করছেন নিজ স্টুডিওতে।
তাঁর ব্যান্ড ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভোকালিস্ট শিবু কুমার শীল লিখেছেন, “শোয়েব অন্যদের সহকর্মী হলেও আমার শিক্ষকের মত ছিল। আমার মতো দেহাতি মানুষের কথাকে যে অল্প কজন মানুষ গানে রূপান্তরিত করেছে সে তার মধ্যে একজন। এ আমার সাত জনমের ভাগ্য। শোয়েবকে মেঘদল মিস করবে এ কথা আর বিশেষ কি বলব। তবে তার এই চলে যাওয়া আমাকে কষ্ট দিচ্ছে এজন্য যে আমি একজন সহযোদ্ধা হারালাম। স্টেজে যার দিকে মুখ করে সবগুলো গান এক নিঃশ্বাসে গেয়ে ফেলতে পারতাম সে দোসর, বন্ধুপ্রতিমজনকে আমি হারালাম। ব্যাক্তিগত জীবনে এর কোনো প্রভাব না পড়ুক এ আমার চাওয়া।”
তিন মাস আগের সিদ্ধান্ত, ব্যান্ড কেন এখনও ঘোষণা দেয়নি এ প্রসঙ্গে শিবু চ্যানেল আইকে বলেন, “শোয়েব মেঘদল ছাড়ার সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানানোর পর আমরা বেশ কয়েকবার তার সাথে বসেছিলাম। মিটিং করেছি। দুর্ভাগ্যবশত কোনো সমাধান হয়নি। করোনাকালীন এই সময়টাতে কোনকিছুই রাতারাতি সিদ্ধান্ত নেয়ার নয় বলে আমরা মনে করেছি। শুধু কোভিডের জন্য না, যেকোনো সিদ্ধান্ত আসলে রাতারাতি নেয়ার কিছু নেই। সময় দিতে হয়। দেখতে হয়। সে কারণেই মেঘদল থেকে অফিসিয়ালি শোয়েবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ে আমরা ভাবিনি। ঘোষণা দেয়ার চেয়ে আমরা তাকে দলে ফিরিয়ে নিতে বেশি উদগ্রীব ছিলাম। চেষ্টা করেছি।
যে ভাবনার জন্যই তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন না কেন, তার সেই ভাবনাকে আমরা রেসপেক্ট করি। কিন্তু তিনি যেহেতু আমাদের সাথে বহুদিন ধরে রয়েছেন, তাকে আমরা ছাড়তে চাইনি! ধরুন আমরা পাঁচজন একটা দলে রয়েছি, তার মধ্যে চারজন একটা বিষয়ে একমত পোষণ করে, বাকি একজন অন্য আরেকটা মত পোষণ করে- সে ক্ষেত্রে সেই একজনকে বোঝানো জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত, কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমার মনে হয় যে ওর মত করে মিউজিকটা শুরু করতে চায়। আমরা তার এই ধারণাটাকে ওয়েলকাম জানাই। আমরা কোনো একটা দল করছি বলে দলের মতো করে ভাবতে হবে সবসময়, এমন নাও হতে পারে। দলের জন্য নিজের সমস্ত কিছু বিসর্জন দিতে হবে এমন না। তবে শোয়েব থাকলে মেঘদল আরো সমৃদ্ধ হতো। আরো দারুণভাবে হয়তো মেঘদল এগিয়ে যেত। তাকে ছাড়া মেঘদল কেমন হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।
তাকে ছাড়া মেঘদল চলবে কিনা, সেটা ঠিক করবে মেঘদলের আরও যারা সদস্য আছেন- সবাই মিলে। আবার এমনও হতে পারে সবার সম্মতিক্রমে যেভাবে চায় সেভাবে নতুন করে শুরু। তবে আমরা এখনই সেটা ভাবছি না।”
২০০২ সালে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে আড্ডা থেকে যাত্রা শুরু ব্যান্ড মেঘদলের। ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা থেকে নেয়া মেঘদল শব্দটি যা অনুবাদ করেছেন কবি বুদ্ধদেব বসু।