এইতো ’৫০-এর দশকে শুরু হল রক এন্ড রোলের সময়। এরপর রক মিউজিকের ইতিহাসে অনেক ব্যান্ড এসেছে গিয়েছে। অনেক মোড় নিয়েছে রক মিউজিক। অনেক বাঁক নিয়ে এখন অন্য এক বাঁকে এসে পৌঁছেছে। এদের ভেতর বেশিরভাগ মানুষ মনে রেখেছে কিছু ব্যান্ডকে তাদের অনবদ্য গানের জন্য আবার কোন ব্যান্ডকে তাদের শোম্যানশিপের জন্য। কিন্তু কিছু রকস্টারদের মানুষ মনে রেখেছে রক মিউজিককে নতুন সংজ্ঞায় নতুন ভাবে প্রকাশের জন্য। এমনই একজন গিটারিস্ট এডওয়ার্ড ভ্যান হ্যালেন- যিনি রক গিটার বাজানোকে সংজ্ঞায়িত করেছেন নতুনভাবে। তাইতো ড্রামার মাইক পোর্টনয় বলেছিলেন,“নেইল পার্ট রক ড্রামিং-এ যা, এডি ভ্যান হ্যালেন রক গিটারে তা-ই”। এডি ভ্যান হ্যালেন ব্যান্ডের প্রথম এ্যালবাম ‘ভ্যান হ্যালেন’-এ বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে নতুন রুপ নিতে যাচ্ছে রক মিউজিক। এরপর বাকিটা শুধুই রাজত্বের ইতিহাস!
গত ৬ অক্টোবর, ২০২০ ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে মারা যান এই কিংবদন্তি গিটারিস্ট। বিশ্বের সব মিউজিশিয়ানরা সম্মান জানিয়েছেন তাঁকে, সম্মান জানিয়েছেন তাঁর রক মিউজিকের প্রভাবকে। এডি যে শুধু ভালো গিটারিস্ট ছিলেন তাই নয়, ছিলেন ভালো লিরিসিস্ট এবং কিবোর্ড বাদকও। ডেভিড লি রথের অনবদ্য গায়কী আর এডি ভ্যান হ্যালেনের উদ্ভাবনী গিটার বাজানো দিয়ে ব্যান্ডটি রক ইতিহাসের সেরা কয়েকটি ব্যান্ডের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক ভ্যান হ্যালেন এর সেরা ১০ টি গান
10ড্যান্স দ্যা নাইট আওয়ে (Dance The Night Away)
গানটি বের হয় ১৯৭৯ সালে ভ্যান হ্যালেন ২ (Van Halen II) অ্যালবামে। গানটি শুনলে বোঝা যাবে যে গিটারিস্ট এডি ভ্যান হ্যালেন শুধু লিড নয়, রিদমও অদ্ভুত সুন্দর বাজাতে পারেন। একটি শক্তিশালী পপ কোরাস আর হালকা তালের গানটিতে আছে বেজিস্ট মাইকেল অ্যান্থনীর সুন্দর বেইজ লাইন আর দুইজনের ব্যাকিং ভোকালও এই গানের অনন্যতা। গানটিতে এডি ভ্যান হ্যালেনের একটি আর্পেজিও হারমোনিক সলো রয়েছে।
9মিন স্ট্রিট (Mean Street)
গানটি প্রথম রিলিজ হয় ভুডু কুইন (Voodoo Queen) নামে ওয়ার্নার ব্রোস ডেমো সিডিতে। তাদের চতুর্থ এ্যালবাম বের করার সময় তারা নতুন লিরিক্স লিখত আর সুর করত। কিন্তু তাদের পরের দিকের অনেক বিখ্যাত গান লি রথ সময়কার রিফস আর কম্পজিশন এর উপর দাঁড় করান। স্যামি হেইগার ধারণা করেছিলেন ব্যান্ডটি তাঁদের শুরুর দিকে খুবই উদ্ভাবনী ছিল।
8ইউ রিয়ালি গট মি (You Really Got Me)
কিছু কিছু গান তাদের নিজেদের গানটাকেও ছাপিয়ে যায়। এই গানটিও তেমন, দ্যা কিঙ্কস (The Kinks) এর একটা জনপ্রিয় গান এটা। গানটি ভ্যান হ্যালেন তাদের নিজেদের মত করে কাভার করে কাভারটিতে তাঁদের নিজস্বতাটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে। অনেকে আগের একটা গানকে তাঁরা একদম ’৮০-র দশকের সাউন্ড দিতে পেরেছিল। এটা কয়েকটা গানের ভেতর একটা যেটা পরবর্তী সময়ে স্যামি হেইগার তাঁর পারফর্ম্যান্স সেটলিস্টে রাখত।
7এভরিবডি ওয়ান্টস সাম (Everybody Wants Some!!)
গানটা রিলিজ হয়েছিল ১৯৮০ সালে তাদের অ্যালবাম Women and Children First-এ। বন্য তালের উপর গানের ড্রাম আর বেইজ পার্ট গানকে এক উন্মত্ততা দেয়। আর ভ্যান হ্যালেন যে জন্য বিখ্যাত, তাদের উন্মুখ যৌনতার ঘোষণা, সেটা নিয়েই। গানটা একটা পাওয়ারহাউজ, পুরা গানেই ক্যাচি ড্রাম আর বেইজ রিদম। সাথে এডি ভ্যান হ্যালেন এর গিটারে জাদু, সব মিলিয়ে গানটা অনবদ্য।
6রানিং উইথ দ্যা ডেভিল (Running With The Devil)
গানটা তাদের প্রথম এলবামেই রিলিজ হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। গানটি ব্যান্ডের অন্যতম হেভি গান যেটা দিয়ে সত্যি বলতে তাঁরা রক মিউজিকের গন্তব্য ও তাঁদের পরিচয় ঠিক করেছিল। গিটারের হেভি রিফ, হাতুরির মতো বাজতে থাকা ড্রামসের স্নেয়ার আর বেইজ, সাথে লি রথের অমানবিক গায়কী গানটিকে সত্যি এক নারকীয় রূপ দিয়েছিল। একটা বিষয় এখানে চলে আসে যে এডি ভ্যান হ্যালেনের ভালো বাজানোর জন্য গিটারে গুলি ছোটানো লাগে না।
5পানামা (Panama)
১৯৮৪ সালে তাদের অ্যালবাম ১৯৮৪ (1984)-এ রিলিজ পেয়েছিল গানটি। শুনলে মনে হবে গানটি পানামায় রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি। কিন্তু আসলে গানটি একটা গাড়ি নিয়ে। গান ভর্তি যৌনতার রেফারেন্স, যেটা লি রথ খুব ভালভাবেই ফুটাতে পারেন। গানটিতে একটা জিনিস স্পষ্ট , এখানে ব্যান্ডটি তাদের সাউন্ড ঠিক রেখে রেডিও ফ্রেন্ডলি গান করার দিকে যাচ্ছিল। গানটিতে এডি ভ্যান হ্যালেন শুধু যে তার শক্তিশালী রিফ আর সলো দিয়েছেন তা-ই নয়, গানটির ভিডিও শুটিংয়ে তাঁর ল্যাম্বোরগিনিও দিয়েছেন।
4জাম্প (Jump)
গানটি ১৯৮৪ সালে একই নামের অ্যালবামে রিলিজ হয়েছিল। যারা ভ্যান হ্যালেন নির্দিষ্টভাবে শোনেনি, কিন্তু গান শোনার অভ্যাস ঠিকই আছে, তারাও এই গানটা একবার হলেও শুনেছে। গানটি এতই বিখ্যাত যে এটা আলাদা করে বলার দরকার নেই যে এটা তাদের গান। গানটি অনন্য কারণ একদিকে গানটি একটি রক কিলার, আবার অন্যদিকে এইটা একটা পপ গানও। একটা কথা এখানে বলে রাখা দরকার যে এডি ভ্যান হ্যালেন যেমন অসাধারন গিটারিস্ট ছিলেন, তেমনি উনি কিবোর্ডও বাজাতেন, এই গানেই তিনি কিবোর্ড সলো বাজিয়েছেন।
3আনচেইনড (Unchained)
গানটি রিলিজ হয় ১৯৮১ সালে তাদের ফেয়ার ওয়ার্নিং (Fair Warning) অ্যালবামে। এই অ্যালবামে ভ্যান হ্যালেন রক মিউজিকের যে ডার্কার থিমটা নিয়ে কাজ করছিলেন তারই প্রতিফলন। ভেতরের অন্ধকার দিকটার সাথে একটা জরুরি যোগাযোগ অ্যালবামে প্রতিফলিত হয়েছিল। ড্রপড টিউন-এ করা গানটি ভ্যান হ্যালেনের অন্যতম সেরা রিফগুলোর একটি। আর এই গানটি রেডিও ফ্রেন্ডলি সেটিং-এর হেভি মেটাল।
2এরাপশন (Eruption)
গানটা তাঁদের প্রথম অ্যালবাম ভ্যান হ্যালেন (Van Halen)-এ রিলিজ পায়। গানটি নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। কিছু কাজ থাকে যা শিল্পীকে শিল্পী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। ধরুন ভ্যান গগের স্ট্যারি নাইট কিংবা গিল্মোরের কম্ফোর্টেইব্লি নাম্ব (Comfortably Numb)-এর সলো, এরা ঐ শিল্পীর ডেফিনিটিভ আর্ট। এডি ভ্যান হ্যালেনের তেমনি একটি কাজ হল এই গান। পুরো গানই একটি ইন্সট্রুমেন্টাল ট্র্যাক যেখানে এডি ভ্যান হ্যালেন প্রথম নিজেকে চেনান। জানান দেন যে রক মিউজিকের ইতিহাস নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। গিটারে ট্যাপিং, খুবই দ্রুত পিকিং (ফ্লাটারিং পিকিং) করে যেটাকে, ওয়ামি বার এফেক্ট, ভলিউম কন্ট্রোল করে কিবোর্ড এফেক্ট এ-সব কিছু তিনি এক ট্র্যাকেই দেখিয়ে দেন। অবশ্যই জিনিসগুলো অনেক আগেই থেকেই ছিল। জেনেসিসের স্টিভ হ্যাকেট সেই ১৯৭১-এ ট্যাপিং, সুইপিং এগুলো বাজাতেন। কিন্তু ভ্যান হ্যালেন যেটা করলেন সেটা হল শোম্যানশিপ। আর রক মিউজিকে শোম্যানশিপ অনেক বড় একটা ব্যাপার। রাতারাতি এই টেকনিক গুলো ছড়িয়ে যায় রক স্রোতাদের ভেতরে, ভ্যান হ্যালেন হয়ে যান রক ’৮০-র দশকের রক গিটারের ঈশ্বর।
1হট ফর টিচার (Hot For Teacher)
একই নামের অ্যালবামে ১৯৮৪ সালে গানটি রিলিজ হয়। এই গানটি ভ্যান হ্যালেনের এক সিগনেচার গান। যদিও গানটি বিখ্যাত হয় এডি ভ্যান হ্যালেনের ভাই ব্যান্ডের ড্রামার অ্যালেক্স ভ্যান হ্যালেনের ড্রাম ইন্ট্রোর কারণে, তবুও গানটিতে এডি ভ্যান হ্যালেনের গিটার সোলো তার সিগনেচার স্টাইলের মতই। গানটি উঠতি বয়সের তাঁদের একজন হাই স্কুল টিচারের ফ্যান্টাসি নিয়ে। গানটিতে ক্লাসরুমকে স্ট্রিপ শো বানিয়ে দিতে দেখা যায় যার কারণে গানটা পেয়েছিল নিষেধাজ্ঞাও। কিন্তু এ গানটিই হয়ে ওঠে ভ্যান হালেন ব্যান্ডের অন্যতম বিখ্যাত গান। গানটির মিউজিক ভিডিও এমটিভি এর জন্য বানান হয়েছিল। এছাড়া ’৮০-র দশকের ট্রেন্ড অনুযায়ী ভিডিওতে ব্যান্ড মেম্বারদের গানের সাথে নাচানাচি করতে দেখা যায়, যেটা করতে ড্রামার এলেক্সকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।