ট্রেন থেকে একজন মধ্যবয়স্ক লোক নামলেন। এলেন বুয়েট ক্যাম্পাসে। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত কিছু দৃশ্য দেখলেন; দেখলেন একজন ছাত্রের সাহায্যের আহ্বানে বাকিদের এগিয়ে আসা, গিটার বাজিয়ে গান, আড্ডা ইত্যাদি। এক পর্যায়ে তিনি আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালেন। আর অ্যাসাইনমেন্টের ছেঁড়া কাগজ নেমে এল রঙিন স্মৃতি হয়ে। সেই স্মৃতিচারণেই কিনা, দেখা গেল এক প্রেমিকের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে প্রিয়তমা। আর আশে পাশে দুষ্ট বন্ধুদের ঠাট্টা-তামাশা তো রয়েছেই। শেষ দৃশ্যে আবারও দেখলাম সেই ট্রেন। হয়ত স্মৃতিচারণ শেষে তিনি ফিরে গেলেন নিজ ঠিকানায়।
বলছিলাম শিরোনামহীনের “ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে” গানের মিউজিক ভিডিও নিয়ে। “ক্যাফেটেরিয়া” গানে যে চোখে প্রতিদিন খুন হত প্রেমিক, সেই চোখে চোখ মেলাতে যাওয়ার চেষ্টার পরিণতি উঠে এসেছে “ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে” গানে।

গানের রিভিউ যেহেতু লিখতে বসেছি তাই এবার গান নিয়ে বলা যাক। গানটির লিরিক লিখেছেন জিয়াউর রহমান জিয়া। শেখ ইশতিয়াক ব্যান্ডের ভোকাল হবার পর থেকে টিনএজ ও তরণদের মনের অন্দরমহল নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে বোহেমিয়ান গানে কাজ করতে দেখেছি আমরা। এ গানেও সমসাময়িক কিছু শব্দের ব্যবহার দেখছি– সেলফি, বিল গেটস, হেড ফোন, ডায়ার স্ট্রেটস ইত্যাদি (যদিও নব্বই দশকের ব্যান্ড তবু ক্লাসিক তো চিরকালই প্রাসঙ্গিক)। এ থেকে ধরে নেয়া যায় এই লিরিক মিলেনিয়াল আর জেনারেশন- জেড কে মাথায় নিয়ে লেখা হয়েছে। এখানে একটু ধাক্কাই খেলাম। কানে শুনছি যা, তা তো মধ্যবয়স্ক একজন ব্যক্তির স্মৃতিচারণ এর সাথে রিলিভেন্ট নয়। এখানে প্রটাগনিস্ট অন্ততপক্ষে জেনারেশন এক্স এর মানুষ। প্রটাগনিস্ট আর্লি মিলেনিয়াল হলে মানা যেত।

যেহেতু জিয়ার লেখা, তিনি তাঁর চিরাচরিত ভারিক্কি চালে লিরিক লিখেছেন। কিন্তু, ভিডিওতে যেই তরুণদের দেখছি তাদের আবেগ প্রকাশের সাথে ভারিক্কি ব্যাপারটা খাপ খাচ্ছে না। ভিডিওর স্টোরিটেলিংটাই বেশ খেলো হয়েছে। শিরোনামহীনের লিরিকের ওজন ঠিক নিতে পারছে না। আমি যদি শব্দ মিউট করে ভিডিও দেখি তাহলে যেই ফিলিংস হবে, ভিডিও না দেখে শুধু অডিও শুনলে তার থেকে ভিন্ন এক্সপেরিয়েন্স হবে। অর্থাৎ ইমোশন বা ফিলিংস মিলছে না। ক্যারেক্টার সিলেকশন এবং সিনেমাটগ্রাফি আরো প্রফেশনাল হতে পারত।

শিরোনামহীন ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ
শিরোনামহীন ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ- ইশতিয়াক, সাইমন, শাফিন, জিয়া, দিয়াত (বাম থেকে)

চিরায়ত শিরোনামহীন কম্পোজিশন ছিল গানটিতে। শুনলে যে কেউ নিঃসন্দেহে ধরতে পারবেন এটি জিয়ার কাজ।

শেখ ইশতিয়াক সময়ের অন্যতম গুণী কণ্ঠশিল্পী তবে এই গানের উঁচু নোটগুলোতে তাঁর গলা সরে যাওয়া তাই অবাক করার মতো ঘটনা। সাধারণত হাই নোটে ইশতিয়াকের কোন সমস্যা হয় না। যাদুকর, বোহেমিয়ান এর মতো গানে আমরা সেই প্রমাণ পেয়েছি।

আরো পড়ুন: গানের মাধ্যমে ওল্ড ব্রিগেডের প্রতিবাদ

শুরুতে অ্যাকুস্টিক গিটারের ইন্ট্রো ভাল ছিল। শাফিনের সরোদ নস্টালজিয়া জাগিয়ে তুলতে চেয়েছে। তাঁরা এক কথায় চমৎকার। শিশিরের রিফ নিখুঁত ব্লেন্ড হয়েছে। তাঁর সলোটিও অসাধারণ। Just classic Shishir! সাইমন চৌধুরীর কি’জ খুব লক্ষ করার মত ছিল।

শ্রোতা হিসেবে আপত্তি করছি চেলো’তে। চেলোর আওয়াজ গম্ভীর। টেনশন অ্যামপ্লিফাই করে। শিরোনামহীনের গানগুলো আমার কাছে মানব জীবন, মন বা সামাজিক ঘটনাবলীর সূক্ষ্ম টানাপোড়েন নিয়ে তৈরি অসাধারণ শিল্পকর্ম বলে মনে হয়; কিন্তু চেলোর আবেদন গাম্ভীর্য নিয়ে আসে। এই স্মৃতিচারণ- নস্টালজিয়া ধারার গানে চেলোর ভারি আওয়াজকে মনে হয়েছে অপ্রাসঙ্গিক। হয়ত জিয়ার চেলো বিষয়ক কোন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আশা করি কোনদিন তিনি তা ভেঙে বলবেন।

আরো পড়ুন: ভ্যান হ্যালেনের বিশ্ব কাঁপানো ১০ গান

তাহলে কী দাঁড়াল? গানটি কি আমার ভাল লেগেছে? -গান খারাপ না। আমি কি আবার এই গানটি শুনব? -না। এই গানটি কি বেঁচে থাকবে?-না। গান যেমনই হোক গান বেঁচে থাকে নির্ভর করে দর্শক কতটা শুনছে তার ওপর। এক বছরে ইউটিউবে এর ভিউ ৫ লাখের একটু বেশি। শিরোনামহীনের গান সাধারণত মিলিয়ন ভিউ পার করে। এর লাইক ডিস্লাইক রেশিও ১৫:১ (প্রতি ১৫ টি লাইকের বিপরীতে একটি ডিজলাইক)। যেখানে, এই অবেলা গানে রেশিও ৪১:১। অর্থাৎ, প্রতি ৪১ জনের পছন্দের বিপরীতে একজন অপছন্দ করেছেন। অনেক কম মানুষ, ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে পছন্দ করছেন।

শিরোনামহীনের এমন আরো অনেক গান রয়েছে যেগুলো বহুদিন মানুষ কোরাস করে দল বেঁধে গাইবে। সব গানের বেঁচে থাকা জরুরী নয়।

Author: Tanvir Al Farabi
Founder, FBS Music Wing
Former President, Dhaka University Band Society-DUBS
Images: Shironamhin
This Bengali write-up is a review of the song Cafeteria Periye by the Shironamhin band from Bangladesh
Previous articleMuSophia’s Pick: Top Bangladeshi Songs of March 2021
Next articleMuSophia’s Pick: Top Bangladeshi Songs of April 2021
Guest Author
This article is written by a guest author. You can also write for us. You can send your article via our contact form or directly via email.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.