আমেরিকান ব্যান্ড বা মিউজিক নিয়ে হলিউডের একটা গৎবাঁধা ধাঁচ আছে। শুরুতে স্ট্রাগল করবে ব্যান্ড, এরপর একটা বিগ ব্রেক পাবে, এক দুইটা সুপারহিট সিঙ্গেল, একের পর এক ট্যুর- শুরু হবে ব্যান্ড মেম্বারদের মধ্যে ক্যাচাল, এরপর ডাউনফল। মাঝখানে প্রেম-বিরহ জাতীয় বিষয় থাকবে, সবশেষে একটা হ্যাপি এন্ডিং।
‘অলমোস্ট ফেমাস’ সেটার ধারেকাছেও যায়নি। কারণ এই গল্পটা কোন ব্যান্ডের না। এটা উইলিয়াম মিলার কিংবা পরিচালক ক্যামেরন ক্রোয়ের জীবনের গল্প যিনি এক সময় ছিলেন রক জার্নালিস্ট। ঠিক এই কারণেই আমেরিকান ব্যান্ড কালচার নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকলে এই সিনেমা দেখা তাদের জন্য শিরোধার্য।
সিনেমার কাহিনী শুরু হয় উইলিয়াম মিলারকে দিয়ে। এই পাকনা পিচ্চি তার গৃহত্যাগী বড় বোনের গাদাখানেক রক অ্যান্ড রোল কালেকশন পেয়ে বিশাল ফ্যান হয়ে যায়, শুরু করে পত্রিকায় ফিচার লেখা। ব্ল্যাক সাবাথের একটা কনসার্ট কাভার করতে গিয়ে তার জীবনে দুটো দারুণ ঘটনা ঘটে— এক হচ্ছে গ্রুপি পেনি লেন এবং তার দলবলের সাথে পরিচয়, আরেক হচ্ছে উঠতি ব্যান্ড স্টিলওয়াটারের লীড গিটারিস্ট রাসেল হ্যামন্ডের সাথে খাতির। রক ব্যান্ড এবং তাদের ভ্রমণসঙ্গী গ্রুপিদের দুঃখজনক গল্পের কিছুটা আঁচ করা যায় এ সিনেমায়।
গল্পে ফিরে আসা যাক, একপর্যায়ে রোলিং স্টোনস ম্যাগাজিন থেকে পিচ্চি উইলিয়ামের কাছে ফোন আসে, তাদের একটা ফিচার দরকার। উইলিয়ামের মাথায় প্রথমেই আসে স্টিলওয়াটারের নাম, আর সেই উদ্দেশ্যে উইলিয়ামও অংশ হয়ে যায় ব্যান্ডটির কান্ট্রি ট্যুরের। আমেরিকার নানা শহরে ঘুরে বেড়ায় তারা, ঘটতে থাকে উদ্ভট সব ঘটনা। নিজের অজান্তেই উইলিয়াম প্রেমে পড়ে যায় পেনি লেনের। কিন্তু পেনি লেনের ভালোবাসার সবটুকুই রাসেলকে ঘিরে- শুরু হয় অদ্ভুত এক টানাপোড়েন।
এমন একটা অবস্থায় স্টিলওয়াটারকে পেয়ে বসে আরো বড়, আরো জনপ্রিয় হবার নেশায়। ফ্যানদের ভুলে তারা প্রাইভেট জেট, বিলাসি জীবনের নামে কর্পোরেট দাসত্বের কবলে পড়ে। একদিন তাদের জেট আকাশে প্রবল ঝড়ের মুখে পড়লে ব্যান্ডের কদর্য দিকগুলো বের হয়ে আসে, দেখা যায় রাসেল হ্যামন্ডের জনপ্রিয়তায় অখুশি বাকি সবাই। শেষতক স্টিলওয়াটার ভেঙ্গে যায়, রক অ্যান্ড রোলের ইতিহাসে তারা পড়ে রয় ‘অলমোস্ট ফেমাস’ একটি ব্যান্ড হয়েই।
আমেরিকান ব্যান্ড কালচার খুবই বিচিত্র। এখানে রক অ্যান্ড রোল কেবল মিউজিক নয়, ধর্মের মত একটা কিছু। এখানে রকস্টারদের ঈশ্বরের কাছাকাছি দেখা হয়, তারা চাইলেই ফ্যানদের মন নিয়ে খেলতে পারেন, ফ্যানরা তাদের সান্নিধ্য পেলেই খুশি। ব্যান্ডের গ্রুপিদের এখানে আবেগ থাকতে নেই, আবেগ দেখালেই মহাবিপদ। এখানে রক ম্যাগাজিনগুলোর সাথে ব্যান্ডগুলোর দা-কুমড়ো সম্পর্ক, এরপরও তারা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করে।
অলমোস্ট ফেমাসের সবচে ভালো দিক হচ্ছে অতি জনপ্রিয় ব্যান্ডের গল্প না বলে পরিচালক উঠতি স্টিলওয়াটারকে দিয়ে আমেরিকান রক কালচার, তার অসঙ্গতিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তবে অম্লমধুর শেষটাই বলে দেয় সবকিছু ছাপিয়ে অলমোস্ট ফেমাস ত্রিভূজ প্রেমের গল্প। সেই প্রেমের সমাধান মেলেনি শেষতক। আপনার জীবনে মিলেছে কী?
Author: Aubhik Rehman
Student, Department of Economics
University of Dhaka