১৫ই এপ্রিল, পহেলা বৈশাখের পরদিন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের নতুন গান ‘যুদ্ধ’। ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে করা সচেতনতামূলক এ গানটি প্রকাশিত হবে সিনা হাসান ও বাংলা ফাইভের ইউটিউব চ্যানেলে।
অনেকটা যুদ্ধ করেই পুরো গানের কাজ করা, যার যার বাসায় বসে। হাতের কাছে আর কিছু না থাকায় ভয়েস টেক দেয়া চাইনিজ ফোনে। এ ব্যাপারে রসিকতা করে সিনা বলেন, যে চায়না থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ালো সেই চাইনিজ ফোন দিয়েই কাজ চালাতে হলো। বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের গিটারিস্ট এর বাসায় সাউন্ড কার্ড না থাকায় অতিথি গিটারিস্ট হিসেবে গিটার টেক দিয়েছেন রেডিওএ্যাক্টিভ ব্যান্ড এর আজমাঈন আদিল। গানটিতে বেইজ ও ড্রামস প্রোগ্রামিং করেছেন আদনান রুশদী। সাউন্ড মিক্স-মাস্টার করেছেন বাটার স্টুডিওর অনিক আহম্মেদ। মিউজিক ভিডিও ইলাস্ট্রেশন করেছেন সিরাজাম মুনিরা এবং ভিডিও এডিট করেছেন জাবেদ জিয়াউদ্দিন।
এভাবে বাসায় বসে, কষ্ট করে কাজটি করার ব্যাপারে বাংলা ফাইভের বক্তব্য, “এভাবে করার উদ্দেশ্য একটাই, নিরাপদে থেকে নিজের কাজটি করতে হবে, তাহলেই এ যুদ্ধে মানুষ জয়ী হবে।” গানটির লিরিক্স লিখেছেন ও সুর করেছেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সিনা হাসান। তিনি বলেন, “মানুষ সভ্য দুনিয়া গড়তে গিয়ে ক্ষমতার লোভে গড়ে তুলেছে শাসনের পিরামিড, কিন্তু তাতে প্রকৃতির বেজেছে বারোটা। এখন থেকে ৩০-৪০ বা ৫০ হাজার বছর আগের ভয়ংকর জীবানুগুলো বের হচ্ছে বরফ গলে। যার সাথে আদিম প্রানীরাও টিকতে পারেনি, আর আজকের মানুষ তো কোন ছাড়। সবমিলে মানুষ দুনিয়ার উপযোগী দুনিয়া গড়তে পারেনি, গড়েছে আত্মবিধ্বংসী ব্যাবস্থা। তাই করোনা আদৌ আউট অফ নো হোয়ার এসেছে, তা কি বলা যায়? হয় এটা নতুন কোনো ‘বায়ো ওয়ার’ এর টেকনিক, অথবা মানুষের প্রকৃতি বিরোধী কর্মের ফলাফল। আর এর দ্বারা আবারো দুনিয়ার বাজার ব্যাবস্থা নতুন করে সাজানো হবে, দুনিয়া চলবে একক হুকুমে, যাকে বলে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার’।
আমি একজন নৃবিজ্ঞানের ছাত্র, মহামারী ও প্রতিষেধকের রাজনীতি অধ্যয়ন করে আমি এই করোনার ভবিষ্যৎ যা দেখতে পাই তাই এ গানে বলার চেষ্টা করেছি।”
মহামারী ও প্রতিষেধকের রাজনীতি দিয়ে যখন বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামো, বিশ্ব বাজারের চিত্র পালটে নতুন করে সাজাতে চায় ঠিক তখনই প্রতিবাদ করতে তৈরি এ হাতিয়ার, গানটি। শিল্পী হিসেবে শিল্পের মাধ্যমেই প্রতিবাদ করতে চায় বাংলা ফাইভের সদস্যরা। গানটির মাধ্যমে মানুষকে নিরাপদে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে চায় ব্যান্ডটি। এর পাশাপাশি চায়, মানুষ যেন জানে যে এটি কোনো ‘ধর্মীয় অভিশাপ’ নয় বরং এক ধরনের রাজনীতি যার সামগ্রিক চিত্র নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। ক্ষমতা কাঠামোয় মানুষের জীবনের মূল্য যে নিতান্তই সামান্য তা আমরা দেখতে পাই বিশ্বযু্দ্ধ দুইটির দিকে তাকালে।
অন্য দিকে, করোনা ভাইরাসে সৃষ্টি হওয়া সংকটের ফলে ১১টি কনসার্ট বাতিল হয়েছে যেগুলোতে বাংলা ফাইভের থাকার কথা ছিলো। এর মধ্যে ভারতে একটি কনসার্টে ফসিলসে্র সাথে একই মঞ্চে বাজানোর কথা ছিলো ব্যান্ডটির। নতুন অ্যালবামের জন্য ৮টি গান তৈরি কিন্তু এ পরিস্থিতিতে স্টুডিওতে কাজ শুরু করতে পারছেন না তারা। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে না বলে তাদের মনে হয়, অন্তত যতদিন না ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রগুলো ও শাসকগোষ্ঠী এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ে।