আপনারা যারা মেটাল সঙ্গীত শোনেন বা না শুনলেও খোঁজ খবর রাখেন তারা হয়তো দেখে থাকবেন, যে কোনো মেটাল কনসার্টে শ্রোতারা নিজেদের ভেতর একে অপরের সাথে আঘাত বা সংঘর্ষের মাধ্যমে এক ধরনের উদ্ভ্রান্ত নৃত্য করে থাকে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি মসপিটের (Moshpit) কথাই বলছি। কিভাবে এই নৃত্য তৈরী হলো, কিভাবে এর প্রচলন হলো এবং শিল্পীরাই বা এটা কতটা উপভোগ করেন সেসব নিয়েই এ লেখা।

আসলে মসপিট কোনো নৃত্য নয়, মসপিট হলো ষ্টেজ এর সামনের জায়গায় যেখানে এই নৃত্য করা হয়। আর এই নৃত্যটিকে বলা হয় Moshing. Moshing হলো এক ধরনের নৃত্য যেখানে শ্রোতারা নিজেদের ভেতর একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে বা নিজেদের শ্রোতাদের ওপর ছুড়ে দিয়ে একটি বিশেষ মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। মূলত এই Moshing প্রথম থেকে মেটাল মিউজিকের অংশ ছিলো না। এই নৃত্যটির উদ্ভব হয় ’৮০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন ডিসির পাঙ্ক মিউজিকের সাথে। এরপর তা ধীরে ধীরে অন্যান্য মিউজিক যেমন-গ্রাঞ্জ, মেটাল এগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি মেটাল মিউজিকের প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই Moshing কিন্তু শুধু একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কির ব্যাপার না। Moshing এর বিভিন্ন ধরণ আছে। যেমনঃ Pogoing (যেখানে সবাই গানের তালে তালে উপরে নিচে লাফায়), Circle Pits (সবাই গোল হয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে) এবং সবচেয়ে উত্তেজনাকর ও ভয়ানক হল Wall of Death (যেখানে শ্রোতারা দুই সারিতে ভাগ হয়ে দৌড়ে এসে একে অপরের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে)। ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই ভয়ংকর!

১৯৯১ সালে ওয়াশিংটনের এন্ড ফেস্টে মসপিট; Source: theparisreview.org

এবার আসা যাক কিভাবে এই নৃ্ত্যটির নাম Mosh হল সে প্রসঙ্গে। এই নৃত্যটির উদ্ভাবনের প্রথমদিকে বিভিন্ন জায়গায় এটিকে Mash বলা হতো। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে Scream ব্যান্ড তাদের ‘Put in a Mosh’ গানে শব্দটির ব্যবহার করে। কিন্তু শব্দটি মূলত শ্রোতাদের সামনে এনে হাজির করেন Bad Brains এর ভোকাল Paul D. Hudson (যিনি H.R বা Human right নামে পরিচিত)। কিন্তু তার জ্যামাইকান উচ্চারণের কারণে ‘Mash’ শব্দটি ‘Mosh’ এর মত শোনায়। এরপর থেকে ‘Mosh’ বলেই শব্দটি পরিচিতি পায়। Moshing প্রথমের পাঙ্ক মিউজিকের দ্বারা সূচিত হলেও ধীরে ধীরে গ্রাঞ্জ এবং মেটাল সিনারিওর মাধ্যমে তা মূলধারার মিউজিকের সাথে জড়িয়ে পরে। আসলে এই Moshing ব্যাপারতা তখন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে শুধু যে পূর্বোক্ত genre গুলোতেই Moshpit হতো তা নয়, প্রায় সবরকম মিউজিকেই দর্শক-শ্রোতা এটা করতে চাইতো। যে মিউজিকই হোক না কেন শ্রোতারা সংগীতের তালে Moshpit এর মাধ্যমেই নিজেদেরকে জনস্রোতে ভাসিয়ে দিত। তাই এটি খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায়, এটি শ্রোতাদের একটি ভাব প্রকাশের মাধ্যম ছিল যার দ্বারা তাদের ভেতরের সমস্ত ক্ষোভ ও রাগের অনুভূতি বের করে মুক্ত হতে চাইত, গানের সাথে একাত্ম হতে চাইত।

women at moshpit
মসপিটে পিছিয়ে নেই নারীরাও; Source: nme.com(getty)

এই Moshpit যতটা উত্তেজনাকর ঠিক ততটাই ভয়ানক। Moshpit এ যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে গুরুতর আহত হওয়া, এমনকি আঘাতে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর Christopher Mitchell নামের একজন স্কুল পড়ুয়া ছাত্র এই Moshpit এর সময় মাথায় আঘাত পেয়ে নিহত হন। Crown Management Strategies, শিকাগোর একটি প্রতিষ্ঠান যারা কিনা এই রকম কনসার্ট এর সময় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, তাদের হিসেব মতে ২২ জন মারা যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, এবং এ পর্যন্ত ১০,০০০ লোক আহত হয়েছে এই Moshpit এ। তাই সঙ্গীত শিল্পীরা এখন এই ব্যাপারে শ্রোতাদের সচেতন করে দেন, অনেকে আবার এটার বিপক্ষেও মত দেন। এক্ষেত্রে Fugazi, Consolidated এর মত ব্যান্ডগুলো Moshing এর বিপক্ষে অবস্থানের জন্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অনেক ব্যান্ডই বর্তমানে ব্যাপারটির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা শ্রোতাদের জন্য নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করারও উদ্যোগ নিয়েছে। তাই অনেক কনসার্টেই এখন নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। জনপ্রিয় মূলধারার ব্যান্ড যেমন Slipknot এর Chris Fehn, Dream Theatre এর ড্রামার Mike Portnoy Moshing এর পক্ষে তাদের আপত্তিসূচক মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে এটা এখন একটা হয়রানি ছাড়া কিছু নয়। তবুও Rock বা Metal ব্যান্ডগুলো যেমন চায় তাদের কনসার্টে এরকম Moshing হোক, ঠিক তেমনি শ্রোতারাও চায় এরকম Moshing এর মাধ্যমে নিজেদের মিউজিকের সাথে ভাসিয়ে দিতে।

ভালো মন্দ সবকিছুরই আছে, কে কীভাবে কতটুকু নেবে এইটাই হলো মূলকথা। দিনশেষে Now You’ve Got Something To Die For বা Laid To Rest এর মত গানের সাথে Moshing হবে না এটা কিন্তু ভাবা যায় না!

Previous articleজোয়ান বায়েজ: গান যার প্রতিবাদের হাতিয়ার
Next articleজোয়ান বায়েজ: প্রেম, প্রতিবাদ ও মানবতা
Sanjay Das, currently a graduate student at the Department of economics, University of Dhaka. He's interested in music, philosophy, poetry, movies; things that are of little value to the material world. A confused soul, he rolls between the world of Nietzsche and Rousseau, he sometimes confuses Jim Morrison with Tagore. He has great enthusiasm for rock music, and sometimes he thinks he would be a perfect match in the 60s rock era, but eventually end up with writing on rock music, which he knows best. Sanjay das daydreams too much, piling up unrealistic thoughts.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.